আকাশপথে চলবে ট্যাক্সি

 অনেক কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে শহরের আকাশে ছোট আকারের যানের ভিড় দেখা যায়৷ সেই স্বপ্নকে দ্রুত বাস্তবে পরিণত করার উদ্যোগ নিচ্ছে জার্মানের এক কোম্পানি৷ দূষণ ও প্রায় শব্দহীন সেই যান প্যারিস অলিম্পিকসে সময়েই নজর কাড়তে পারে৷ এখন ট্যাক্সি চলবে আকাশে। ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।




যানটির নাম রাখা হয়েছে ‘ভোলোসিটি’। এটি এয়ার ট্যাক্সি নামেও পরিচিত। এটি যখন টেক অফ করে বা পাশ দিয়ে উড়ে যায়, তখন প্রায় কিছুই শোনা যায় না৷ সেটির আটটি ইলেকট্রিক প্রপেলার কোনো শব্দই করে না৷ হেলিকপ্টার বা বিমানের মতো কোনো ধোঁয়াও বের হয় না৷ জার্মানির দক্ষিণে ব্রুখসাল শহরে ভোলোকপ্টারের পরীক্ষামূলক উড়াল দর্শকদের মনে বেশ দাগ কেটেছে। 

টেস্ট পাইলট হিসেবে পল স্টোনের ইতোমধ্যেই ৫০টিরও বেশি উড়ালের অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ তার মতে, প্রত্যেকটি উড়ালের সঙ্গে যন্ত্রের উন্নতি করা হয়েছে৷ এখন সেটি বোয়িং বা এয়ারবাসের দূরপাল্লার বিমানের মতোই নির্ভরযোগ্য৷ পল বলেন, ‘হেলিকপ্টারের তুলনায় এটা ওড়ানো অনেক সহজ৷ এক ডিজিটাল ফ্রাইট কনট্রোল সিস্টেম থাকায় হেলিকপ্টারের মতো অনেক রহস্যজনক কমান্ড দিতে হয় না৷ ফলে চালানো সহজ হয়৷ এগোতে গেলে একটি স্টিক সামনের দিকে ঠেলতে হবে৷ পাশে যেতে হলে স্টিক সে দিকেই ঠেলতে হবে।’


প্রতিবেদনে বলা হয়, সদ্য উদ্বোধন করা হ্যাঙারের মধ্যে ভোলোকপ্টার কোম্পানির কর্ণধার ডিয়র্ক হোকে বড় আকারে ‘ভোলোসিটি’ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছেন৷ আপাতত বছরে ৫০টি ইউনিট তৈরি করা তার লক্ষ্য৷ আগামী বছরের মাঝামাঝি প্যারিসে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা শুরু হবার আগেই তিনি সেখানে নিয়মিত এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা চালু করার উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন৷ পাইলটরা নিয়মিত মাসুলের বিনিময়ে যাত্রীদের নিয়ে উড়বেন। 


ভোলোকপ্টার কোম্পানির কর্ণধার ডিয়র্ক হোকে বলেন, ‘আমরা প্যারিসে শুরু করে ২০২৪ সালে রোমে যাবো৷ বছরের শেষের মধ্যে সম্ভবত সিংগাপুরেও পরিষেবা শুরু করবো৷ ২০২৫ সালের শুরুতে আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে আরো সক্রিয় হবো৷ সৌদি আরবের নিয়ম এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে জাপানের ওসাকা শহরে ওয়ার্ল্ড এক্সপোর সময়ও পরিষেবা দেব।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভোলেকপ্টার গোটা বিশ্বেই নিজস্ব কনসেপ্ট তুলে ধরতে চায়৷ সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক সত্ত্বেও ‘ফিউচার সিটি’ প্রকল্প হিসেবে নিয়মে সক্রিয় হতেও পিছপা হচ্ছে না এই কোম্পানি৷ ব্রুখসালে নতুন একটি কারখানা ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে৷ সেখানেই ‘ভোলোসিটি’ র অংশগুলি বড় আকারে উৎপাদন করা হবে৷ কোম্পানির মতে, বিশাল চাহিদা দেখা যাবে। 


মূলত, এভিয়েশন ক্ষেত্রে বর্তমানে রূপান্তর ঘটছে বলেই কোম্পানির এমন প্রত্যাশা৷ জেনেভায় ব্যক্তিগত জেটের বাণিজ্য মেলায় লিলিয়ামের মতো প্রতিযোগীও পরিবেশ বান্ধব উড়ালের নিজস্ব কনসেপ্ট তুলে ধরছে৷ বিদ্যুৎচালিত উড়ন্ত যান আকাশপথে নতুন যুগের সূচনা ঘটাতে পারে। 

এদিকে, ডিয়র্ক হোকের স্বপ্ন নির্গমন ছাড়াই উড়াল সবার সামর্থ্যের মধ্যে আনা। তার মতে, ‘শুরুর দিকে হাতে করে অনেক কাজ করতে হয়। ফলে বিমানের মূল্য বেশি থাকে। কিন্তু বড় আকারে সিরিজ প্রোডাকশন শুরু করলেই ভারসাম্য চলে আসবে৷ তখন অত্যন্ত ন্যায্য দামে আমরা বিমান উৎপাদন করতে পারবো৷ আমাদের ইতোমধ্যেই এক কারখানা রয়েছে, যা দিয়ে আমরা বছরে ৫০টি বিমান তৈরি করতে পারি৷ তখন টিকিটের দামও সবার নাগালে চলে আসবে।’        

এছাড়া, নিরাপত্তার নিরিখে ‘ভোলোসিটি’ প্রচলিত বেসামরিক বিমানের জন্য একই নিয়ম মেনে অনুমোদন পেয়েছে৷ অর্থাৎ প্রতি একশো কোটি ফ্লাইট আওয়ারে বড়জোর একটি করে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। 

Post a Comment

0 Comments